শুক্রবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১১

আমরা কিভাবে ভেবে থাকি

এক শুক্রবার জুম্মার নামাজে মোনাজাতের সময় সম্মানিত ঈমাম সাহেব দোয়া করছিলেন “ইয়া রব্বুল আলামিন, এখানে সবাই ছাত্র। সবাই চর্চার সাথে জড়িত। মেহেরবানী করে সকলের স্মৃতি শক্তিকে তুমি বাড়িয়ে দাও।” ছাত্রদের জন্য এটাই ছিল তার দোয়া। এবং প্রায় মসজিদে ছাত্রদের জন্য এরকম দোয়াই শুনি। উনাদের উদ্দেশ্য নিশ্চয়ই আন্তরিক । আসুন দেখি ঘটনাটি বিশ্লেষণ করে দেখি।

কেন উনি শুধু স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য দোয়া করছেন? মূলত আমাদের দেশে পড়াশোনা মুখস্থ নির্ভর। পরীক্ষার আগে গোগ্রাসে গেল (মুখস্থ কর) আর পরীক্ষার হলে সব বমি করে দিয়ে আস। এই কাজ যে যত ভাল করবে সে তত ভাল ছাত্র। কিন্তু মুখস্থ করাই কি সব? ছাত্রদের কাজ কি টেপরেকর্ডারের মত শুধু মুখস্থ করা। আমাদের অবশ্য এ নিয়ে খুব একটা মাথা ব্যথা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের গবেষণা শিখতে হয়। নতুন জ্ঞান আহরণের কৌশল শিখতে হয়। গবেষণা করতেও হয়। এখানে শুধু মাত্র প্রখর স্মৃতি শক্তির অধিকারী হলেই চলবে না। সাথে আরও অনেক গুণাবলীও থাকতে হবে। কিন্তু আমরা দোয়া করার সময় স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধির দোয়া ছাড়া পড়াশোনা সংক্রান্ত আর কিছু এ পর্যন্ত শুনিনি। অবশ্য এক্ষেত্রে আমার শোনার পরিমাণ অনেক কম।

মসজিদের আরো কিছু বিষয় আমাকে ভাবায়। যেমন, নামাজে জামায়াতে দাঁড়ানোর সময় বলা হয়েছে কাধে কাধ মিলিয়ে দাড়াতে। মুসল্লিদের সহজে বোঝানোর জন্য বলা হয় পায়ের গোড়ালীর সাথে গোড়ালী মিলিয়ে দাড়াতে। পার্থক্য দেখেছেন। এতে হয়ত প্রায় সময় কাতার সোজা হয়। কিন্তু অনেকের দাড়ানোর ভঙ্গিটা কিছুটা অন্যরকম। অনেকে গোড়ালী মিলিয়ে দাড়ালেও কাতারের চেয়ে কিছুটা সামনে বা পিছনে হেলে থাকে। তাদের উচিত হবে পাশের জনের সাথে কাধে কাধ মিলিয়ে দাড়ানো। কিন্তু ঐযে হুজুর বলে দিয়েছে পায়ের গোড়ালী মিলিয়ে দাড়াতে হবে তাই তারা পায়ের গোড়ালী মিলিয়েই দাড়ায় এবং কাতার বাকাঁ হয়ে যায়।

সর্বশেষ আরেকটা বিষয়ে আপনাদের মনযোগ আকর্ষন করি। আপনারা কি খেয়াল করেছেন বাংলাদেশের অধিকাংশ মসজিদেরই নির্মাণ হয়েছে কোন পরিকল্পনা ছাড়া বা দূর্বল পরিকল্পনা নিয়ে। আমাদের দেশে যেটা হয়, কোথাও যদি কোন নামাজ ঘর বা জুম্মা মসজিদ নির্মান করার সময় প্রথমে কোনরকমে একটা ঘর দাড় করানো হয়। তারপর ধীরে ধীরে বিভিন্নজনের কাছ থেকে চাঁদার টাকা প্রপ্তির সাপেক্ষে মসজিদের অবকাঠামো গত উন্নতি হয়ে থাকে। সেটা অনেকটা এরকম, বাশ ও টিনের ঘর > পাকা দেয়াল ও টিনের চালা > পাঁকা মেঝে,দেয়াল ও টিনের চালা > পরে মসজিদের প্রধান অংশের ছাদ ঢালাই। এভাবে বারান্দা পাকা করা হয়। একইভাবে একতলা থেকে দোতালা, তারপর তিনতলা। এভাবে চলতে থাকে। এত মানুষের দানের টাকায় যে মসজিদ নির্মাণ করা হবে এর যে কোন পরিকল্পনা করার দরকার আছে এটা কারো মাথায়ই আসেনা। সমস্যা দেখা দেয় যখন জুম্মার সময় একসাথে অনেক লোক নামাজ পড়তে আসে তখন। মসজিদে তো ধীরে ধীরে লোক প্রবেশ করে, কিন্তু নামাজ শেষ হলে মসজিদ থেকে বের হতে কোন কোন সময় ১০-১৫ মিনিটও লেগে যায়। চিন্তা করুন তিনতলার উপরে একসাথে নামাজ পড়তে পরে প্রায় ৫০০-১০০০ লোক। তাদের জন্য যে সিড়ি তা দিয়ে পাশাপাশি দুই জন হেটে যেতে পাড়ে। আল্লাহ্‌ না করুক যদি কখনও কোন দুর্ঘটনা ঘটে, দেখা যাবে মুসল্লিরা দ্রুত বের হতে গিয়ে পায়ের তলায় পড়েই কয়েকজন মারা যাবে। যারা এসব মসজিদ পরিচালনা করেন তাদের কারো পাকা দালানবাড়ি দেখান তো যে পরিকল্পনা ছাড়া করেছে। কিন্তু মসজিদ নির্মানের সময় কোন আর্কিটেক্ট বা পরিকল্পনাবিদের এর কাছে যাওয়ার প্রয়োজন আমরা অনুভব করি না। বাংলাদেশে পাঁচওয়াক্ত নামাজে মসজিদ সমুহে বেশি ভিড় হয় না বলে তেমন একটা সমস্যা বোঝা যায় না। কিন্তু বিপত্তি দেখা যায় শুক্রবারের জুম্মার নামাজের সময় ছাড়া। আমি ঢাকাতে এমনও একটি মসজিদ দেখেছি যেটা একবারে চতুর্থ তলায়। একসাথে ৭০০-৮০০ লোক একবারে নামাজ আদায় করতে পারবে। কিন্তু সিড়ির প্রস্থ ২.৫ ফুটের বেশি নয়। এসব মসজিদের সাথে জড়িত মানুষের ধারণা তারা মসজিদ পরিচালনা করে খুব পূণ্যের কাজ করছেন। তাদের আন্তরিকতার ব্যাপারে আমি কোন সন্দেহ প্রকাশ করি না। কিন্তু ধরুন কোন একটা মসজিদের নির্মান ত্রুটি বা নকশার ত্রুটির কারণে দূর্ঘটনায় বেশ কিছু মুসল্লি আহত ও নিহত হয়, তাহলে এর দায়ভার কে নিবে?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন